১৯৩৪ সালের ১ জানুয়ারি কলকাতার ক্রাউন থিয়েটারে মুক্তি পায় পৌরাণিক কাহিনি অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘ধ্রুব’। নাট্যকার গিরিশচন্দ্র ঘোষের ধ্রুব নাটক অবলম্বনে ছবিটি যৌথভাবে পরিচালনা করেছিলেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও সত্যেন্দ্রনাথ দে। গান লেখা, সুর করা ও গাওয়ার পাশাপাশি নজরুল অভিনয়ও করেছিলেন ছবিটিতে। নারদ চরিত্রে তাঁর ঝাঁকড়া চুল, গলায় মালা আর সিল্কের কুর্তার রূপ দর্শকদের চমকে দিয়েছিল।
গবেষকদের মতে, এই ছবির মাধ্যমেই নজরুল প্রথম বাঙালি মুসলমান চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে ইতিহাসে স্থান করে নেন। চলচ্চিত্র গবেষক অনুপম হায়াৎ বলেন, “তিনি পাইওনিয়ার; সমাজের প্রচলিত বাধা ভেঙে এগিয়ে এসেছিলেন।”
তখনকার কলকাতায় ‘ধ্রুব’ দর্শকদের মাঝে জনপ্রিয়তা পায়। সংগীত ও কাহিনির কারণে এটি সমাদৃত হয়েছিল। ঢাকাতেও ছবিটি প্রদর্শিত হয় এবং মোটামুটি সাড়া পায়। কলকাতার চলচ্চিত্রতাত্ত্বিক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় জানান, সবাক যুগের গোড়ার দিকে সফল বাংলা ছবির তালিকায় ‘ধ্রুব’ ছিল অন্যতম।
চলচ্চিত্রটির বিশেষ গুরুত্ব আরেক জায়গাতেও ধরা পড়ে—১৯৫৯ সালে সত্যজিৎ রায়ের ‘অপুর সংসার’ ছবিতে প্রেক্ষাগৃহের এক দৃশ্যে পর্দায় ‘ধ্রুব’-এর অংশবিশেষ ব্যবহার করা হয়।
তবে পুরো চলচ্চিত্রটি আজ আর সহজলভ্য নয়। বর্তমানে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভে মাত্র ১০ মিনিটের একটি রিল সংরক্ষিত রয়েছে। গবেষক মীর শামছুল আলম জানান, কলকাতার এক সংগ্রাহকের কাছে বাকি রিলগুলো ছিল, কিন্তু অর্থের অভাবে সেগুলো কেনা সম্ভব হয়নি। অনুপম হায়াৎ এ প্রসঙ্গে বলেন, “মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন কর্মকর্তারা ছবিটির মর্ম অনুধাবন করতে পারেননি। ফলে ছবিটি বাংলাদেশে সংরক্ষিত হয়নি।”
কিছু সাদা–কালো ক্লিপ অনলাইনে পাওয়া গেলেও পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্র আর মেলে না। ২০২০ সালে টাইমস অব ইন্ডিয়া–এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ছবিটির নেগেটিভ কলকাতার এনটিওয়ান স্টুডিওতে রাখা ছিল, তবে যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেগুলো নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছিল।
গবেষকেরা মনে করেন, যথাসময়ে উদ্যোগ নিলে আজও চলচ্চিত্রটি উদ্ধার করা সম্ভব। তাঁদের মতে, নজরুলের এই একমাত্র পরিচালিত চলচ্চিত্র কেবল বাংলা সিনেমার ইতিহাস নয়, সমগ্র উপমহাদেশের চলচ্চিত্র ঐতিহ্যের এক অমূল্য সম্পদ।