থাইল্যান্ডের সাংবিধানিক আদালত দেশটির প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রাকে বরখাস্ত করেছে। বরখাস্তের কারণ হিসেবে আদালত উল্লেখ করেছে, গত জুনে তিনি কম্বোডিয়ার সাবেক নেতা হুন সেনের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময় নৈতিকতা লঙ্ঘন করেছেন।
ফোনকলে পেতংতার্ন হুন সেনের প্রতি আপসমূলক মনোভাব দেখান এবং থাইল্যান্ডের সামরিক কমান্ডারদের সমালোচনা করেন। পরে পেতংতার্ন দাবি করেন, ফোনকলে কূটনৈতিক সাফল্য অর্জনের চেষ্টা করেছিলেন।
পেতংতার্নের বাবা থাকসিন সিনাওয়াত্রার পুরনো বন্ধু হুন সেন। পেতংতার্ন বলেন, ফোনের আলাপ–আলোচনা ফাঁস হওয়া তাঁর দল ফিউ থাই পার্টির জন্য অস্বস্তিকর ছিল। ঘটনা প্রকাশের পর তাঁর পদত্যাগের দাবি ওঠে, এবং ক্ষমতাসীন জোটের বড় অংশীদার দলও সরকার ছেড়ে যায়।
ফোনকলের তথ্য ফাঁস হওয়ার ঘটনায় গত জুলাইয়ে আদালতের নয়জন বিচারকের মধ্যে সাতজন পেতংতার্নের প্রধানমন্ত্রিত্ব স্থগিত রাখার পক্ষে ভোট দেন। শুক্রবার আদালত তাঁকে বরখাস্ত করে, যা অপ্রত্যাশিত কিছু ছিল না।
থাইল্যান্ডের সংবিধান অনুযায়ী, এখন খুব সীমিত তালিকা থেকে পার্লামেন্টের সদস্যরা নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করবেন। পেতংতার্নের বরখাস্ত হওয়া দেশটির পঞ্চম প্রধানমন্ত্রীর ঘটনা। বিচার বিশ্লেষকরা মনে করেন, আদালত প্রায়শই রক্ষণশীল ও রাজতন্ত্রপন্থী শক্তির চোখে হুমকি হিসেবে বিবেচিত নেতাদের বিরুদ্ধে রায় দেয়।
ফোনকলের বিষয়টি ফাঁস করেছিলেন হুন সেন নিজেই। পেতংতার্ন হুন সেনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার ‘পেশাদারিত্বসুলভ নয়’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। হুন সেন এই মন্তব্যকে ‘অপমানজনক’ উল্লেখ করে সত্য ফাঁস করার সিদ্ধান্ত নেন। ঘটনার পর থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে সীমান্তে উত্তেজনা দেখা দেয়, যা পাঁচ দিনের সংঘাতে রূপ নেয়। এতে দুই দেশের ৪০-এর বেশি মানুষ নিহত হন।
ফিউ থাই পার্টির পরবর্তী সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন চাইকাসেম নিতিসিরি এবং অনুতিন চার্নভিরাকুল। অনুতিন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ফোনকল ফাঁসের পর ভুমজাইথাই পার্টিকে সরকার থেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন। তবে নতুন সরকার স্থিতিশীল হবে কিনা, তা অনিশ্চিত।
বর্তমানে থাইল্যান্ডের পার্লামেন্টে সবচেয়ে বেশি সদস্য ১৪৩ জন নিয়ে বিরোধী দল দ্য পিপলস পার্টি। তারা নতুন জোটে যোগ দেবেন না এবং নতুন নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত বিরোধী দলে থাকবেন। তাই দেশটি রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণে নতুন নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে।
ফিউ থাই পার্টি বর্তমানে নির্বাচন চায় না। ক্ষমতায় থাকা দুই বছরে দেশের অর্থনীতি পুনর্গঠন করতে ব্যর্থ হয়েছে দলটি। তরুণরা মনে করেন, পেতংতার্ন দেশে কার্যত নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি এবং বড় সিদ্ধান্তগুলো তাঁর বাবা থাকসিন নিতেন।
ফিউ থাই পার্টির প্রতিশ্রুত প্রজেক্ট ‘ডিজিটাল ওয়ালেট’ কার্যকর হয়নি। কম্বোডিয়ার সঙ্গে সীমান্ত সংঘাতের সময় সিনাওয়াত্রা পরিবারের দীর্ঘদিনের সম্পর্কও রক্ষণশীল মহলে সন্দেহ তৈরি করেছে।
সব মিলিয়ে ফিউ থাই পার্টির জনপ্রিয়তা কমে গেছে। আগামী নির্বাচনে তাদের ১৪০টি আসনের মধ্যে কিছু হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। দুই দশকের বেশি সময় ধরে দলটি রাজনীতিতে শক্তিশালী হলেও, এখন তা পুনরায় ফিরবে কিনা তা অনিশ্চিত।