জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) হল সংসদ নির্বাচনে ১০২ জন প্রার্থীর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। এছাড়া ৬৩টি পদে কোনো প্রার্থী উপস্থিত নেই, ফলে সেগুলো শূন্য থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি আবাসিক হলে প্রতিটি হলে ১৫টি করে পদ রয়েছে।
গতকাল শুক্রবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হল সংসদের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা অনুযায়ী, জাকসু নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকাও প্রকাশ করা হয়েছে। জাকসুতে ২৫টি পদে ১৭৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। সহসভাপতি (ভিপি) পদে ১০ জন এবং সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
৩৩ বছর পর আগামী ১১ সেপ্টেম্বর জাকসু এবং হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের প্রচারণা আজ শনিবার থেকে শুরু হয়ে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে। এবারের মোট ভোটার সংখ্যা ১১,৯১৯ জন, যার মধ্যে ৬,১০২ জন ছাত্র এবং ৫,৮১৭ জন ছাত্রী।
হল সংসদ নির্বাচনে ২১টি আবাসিক হলে মোট ৩১৫টি পদ রয়েছে। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা অনুযায়ী, ১০২টি পদে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই, ফলে ওই প্রার্থীরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে জয়ী হবেন। ৬৩টি পদ শূন্য থাকবে, অর্থাৎ ৩১৫টির মধ্যে ১৫০টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।
ছাত্রী হলে ১০টি আবাসিক হলের মধ্যে নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলে ভিপি, জিএসসহ ৬ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন। বাকি ৯টি পদ শূন্য। বেগম সুফিয়া কামাল, প্রীতিলতা, ফজিলাতুন্নেছা, ১৫ নম্বর ছাত্রী হলে ভিপি পদেও প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন।
ছাত্র হলে ১১টি হলের মধ্যে আ ফ ম কামালউদ্দিন হলে ৫ জন, আল-বারুনী ৫ জন, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ৮ জন, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১ জন, মওলানা ভাসানী ৩ জন, মীর মশাররফ হোসেন ২ জন, শহীদ রফিক-জব্বার ৩ জন, শহীদ সালাম-বরকত ৯ জন, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ ৪ জন, ১০ নম্বর ছাত্র ৩ জন এবং ২১ নম্বর ছাত্র ৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন।
২১টি হলে মোট ১৬টি হলে শূন্য পদ রয়েছে। সবচেয়ে বেশি শূন্য পদ ১৩ নম্বর ছাত্রী হলে (১২টি), নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলে (৯টি) এবং বেগম খালেদা জিয়া হলে (৭টি)। নির্বাচন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার জানিয়েছেন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী প্রার্থীদের ঘোষণা করা হবে। শূন্য পদগুলোতে নির্বাচনের পর পুনরায় নির্বাচন হবে।
জাকসুতে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য ২৭ আগস্ট খসড়া তালিকায় ২৭৬ জনের নাম ছিল। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর ৯৭ জন বের হয়ে যান, ফলে চূড়ান্ত তালিকায় ১৭৯ জন রয়ে যান। ভিপি পদে ১০, জিএস পদে ৯, অন্যান্য বিভিন্ন সম্পাদক ও কার্যকরী সদস্য পদে ৩–১০ জন করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
বামপন্থী শিক্ষার্থীরা ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ নামে প্যানেল ঘোষণা করেছে। ভিপি পদে প্রার্থী হয়েছেন অমর্ত্য রায় জন, জিএস পদে শরণ এহসান। প্যানেলে ১১ জন নারী, সাতজন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, ৬ জন সনাতন ধর্মাবলম্বী, ৩ জন বৌদ্ধ ও ২ জন খ্রিষ্টধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থী রয়েছেন।
‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন’ প্যানেলও ১৮ সদস্যের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। প্যানেল ঘোষণার সময় উপস্থিত ছিলেন শহীদ আলিফ আহমেদ সিয়ামের বাবা।
সহ–উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ বলেছেন, দীর্ঘ সময় ধরে ক্যাম্পাসে দল-মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সহনশীল রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সহাবস্থান ছিল না। তাই অনেক শিক্ষার্থী জাকসুকে রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে দেখছেন না। তবে ধারাবাহিকভাবে নির্বাচন হলে ও নির্বাচিত প্রতিনিধিরা ইতিবাচক কাজ করলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি উন্নত হবে।