যুক্তরাজ্যের রাজপরিবারে পাঁচ বছরের টানাপোড়েনের পর বাবা–ছেলের সম্পর্ক নতুন করে গড়ার ইঙ্গিত মিলছে। রাজা তৃতীয় চার্লস ও তাঁর ছোট ছেলে প্রিন্স হ্যারির মধ্যে দীর্ঘদিনের দূরত্ব এবার কিছুটা কমতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আগামী ৮ সেপ্টেম্বর লন্ডনে ওয়েলচাইল্ড পুরস্কার অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন প্রিন্স হ্যারি। অসুস্থ শিশু ও তাঁদের পরিবারকে সহায়তা করা এই সংস্থার তিনি ১৭ বছর ধরে পৃষ্ঠপোষক। এর আগে গত এপ্রিলে আদালতের শুনানিতে অংশ নিতে তিনি যুক্তরাজ্যে গিয়েছিলেন, তবে সে সময় রাজা চার্লস ইতালিতে সফরে থাকায় তাঁদের দেখা হয়নি।
এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। রাজা সে সময় যুক্তরাজ্যে থাকবেন, স্কটল্যান্ডের বালমোরাল এস্টেটে অবস্থান করবেন তিনি। ক্যানসারের চিকিৎসা ও দায়িত্ব পালনে রাজা নিয়মিত দক্ষিণে যাতায়াত করায় বাবা–ছেলের সরাসরি সাক্ষাতের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি হ্যারি বাবার সঙ্গে দেখা করেছিলেন। চার্লসের অসুস্থতার খবর প্রকাশ্যে আসার পর তিনি সরাসরি ক্লারেন্স হাউসে গিয়ে অল্প সময় বাবার সঙ্গে কাটিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যান।
সম্প্রতি হ্যারি ও মেগানের নতুন জনসংযোগ দলের কার্যক্রম সম্পর্কের বরফ গলার আভাস দিয়েছে। জুলাইয়ে দলের প্রধান মেরেডিথ মেইন্স লন্ডনে বৈঠক করেন এবং রাজা চার্লসের যোগাযোগসচিব টোবিন আন্দ্রেয়ার সঙ্গে তাঁর ছবি প্রকাশ্যে আসে। ‘দ্য সিক্রেট হ্যারি পিস সামিট’ শিরোনামে প্রকাশিত এ ঘটনা ইঙ্গিত দেয়, উভয় পক্ষই সম্পর্ক পুনর্গঠনে আগ্রহী।
এদিকে সরকারি নিরাপত্তা না পাওয়ায় করা মামলায় হ্যারি সম্প্রতি পরাজিত হয়েছেন। মামলাকালীন বাবা–ছেলের কোনো যোগাযোগ হয়নি। তবে গত মে মাসে বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হ্যারি পুনর্মিলনের আশা প্রকাশ করেছিলেন।
হ্যারির স্মৃতিকথা স্পেয়ার পরিবারে বিভাজন আরও বাড়ালেও বইটিতে তিনি বাবার শান্তির আহ্বান উল্লেখ করেন। পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, সাম্প্রতিক নীরবতা ও প্রচারবিমুখতা এবার গোপনে পুনর্মিলনের চেষ্টা নির্দেশ করছে।
ওয়েলচাইল্ড অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে হ্যারি বলেন, “এটি সব সময়ই আমার জন্য সম্মানের। অসুস্থ শিশুদের গল্প আমাদের করুণা, সংযোগ আর সম্প্রদায়ের শক্তির কথা মনে করিয়ে দেয়।”
লন্ডন সফরে তিনি আরও কয়েকটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারেন এবং স্থানীয় দাতব্য সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ করবেন। গত মে মাসেও তিনি নটিংহ্যামে দরিদ্র পরিবারগুলোর জন্য বড় অঙ্কের অনুদান দেন এবং সামরিক বাহিনীর প্রয়াত সদস্যদের সন্তানদের সংগঠনের শিশুদের হাতে মিষ্টি পাঠান।
সব মিলিয়ে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে হ্যারির সম্পর্ক এখনো দৃঢ় থাকলেও বিশ্বাস পুনর্গঠনই রয়ে গেছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।