১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট ব্রিটিশ রাজকুমারী প্রিন্সেস ডায়ানা সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। মাত্র ৩৬ বছর বয়সে তার আকস্মিক মৃত্যু পুরো বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়। ডায়ানা তখন যুক্তরাজ্যের বর্তমান রাজা তৃতীয় চার্লসের প্রথম স্ত্রী ছিলেন। রূপ, সৌন্দর্য ও ফ্যাশনের কারণে তিনি স্টাইল আইকন হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
ডায়ানা দুটি পুত্রের জননী। তিনি বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজে যুক্ত ছিলেন—এইডস সচেতনতা বৃদ্ধি, অসুস্থ শিশুদের পাশে থাকা এবং ভূমি মাইন নিষেধাজ্ঞা প্রভৃতি। সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে যাওয়ার কারণে তিনি ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হন।
সরকারি তদন্তে তার মৃত্যুকে দুর্ঘটনা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তবে অনেকে এটিকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করেন। ২০০৩ সালে প্রকাশিত একটি চিঠি এই দাবিকে আরও শক্তিশালী করে। চিঠিতে ডায়ানা স্পষ্টভাবে লিখেছিলেন, তার গাড়ি ভাঙিয়ে তাকে হত্যা করা হতে পারে।
ডায়ানা ফ্রান্সিস স্পেন্সার ১৯৬১ সালের ১ জুলাই নরফোক কাউন্টির স্যান্ড্রিংহামের পার্ক হাউসে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৭ সালে ১৬ বছর বয়সে তিনি যুবরাজ চার্লসের সঙ্গে পরিচিত হন। চার্লস তখন ২৯ বছর বয়সী ছিলেন এবং তার আগের সম্পর্ক ডায়ানার বড় বোনের সঙ্গে ছিল।
ডায়ানা সুইজারল্যান্ডের বোর্ডিং স্কুল শেষ করে লন্ডনে ফিরে কিন্ডারগার্টেনে শিক্ষক হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৮১ সালের ২৯ জুলাই চার্লস ও ডায়ানার বিবাহ সেন্ট পল’স ক্যাথিড্রালে অনুষ্ঠিত হয়। এটি ‘বিংশ শতাব্দীর রূপকথার বিয়ে’ হিসেবে বিশ্বজুড়ে পরিচিত হয়, এবং প্রায় ৭৫ কোটি মানুষ টেলিভিশনে অনুষ্ঠানটি দেখেন।
বিবাহের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই জীবনে অশান্তি আসে। চার্লস সাবেক প্রেমিকা ক্যামিলা পার্কার বোলসের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখেন। অবশেষে ১৯৯৬ সালে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়।
১৯৯৭ সালের আগস্টে ডায়ানা ইতালির সার্দিনিয়া দ্বীপে নৌবিহারে যান দোদি আল–ফায়েদের সঙ্গে। ৩০ আগস্ট তারা প্যারিসে লা বুরজে বিমানবন্দর অবতরণ করেন। পাপারাজ্জিদের তাড়া এড়িয়ে হোটেল রিৎজে প্রবেশ করেন।
৩১ আগস্ট রাত ১২টা ২০ মিনিটে ডায়ানা ও দোদি গাড়িতে হোটেল থেকে বের হন। গাড়ি চালাচ্ছিলেন হেনরি পল। তারা সিটবেল্ট পরেননি এবং গাড়ির গতি নির্ধারিত সীমার চেয়ে তিনগুণ বেশি ছিল। হঠাৎ গাড়ি প্যারিসের পন্ত দে ল’আলমা সুড়ঙ্গপথে একটি কংক্রিট পিলারে আছড়ে পড়ে। দোদি ও চালক হেনরি পল ঘটনাস্থলেই মারা যান। ডায়ানাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়, তবে ভোর ৪টায় তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
প্রাথমিক তদন্তে বলা হয়, পাপারাজ্জিদের তাড়া এড়াতে অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানো ও চালকের মদ্যপ অবস্থার কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে ডায়ানার মৃত্যু নিয়ে ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব ও গুজব ছড়িয়ে পড়ে। দোদি আল–ফায়েদের বাবা এবং কিছু গণমাধ্যম এটিকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হিসেবে দাবি করেন।
ডায়ানা মৃত্যুর এক বছর আগে একটি চিঠি লিখেছিলেন, যেখানে তিনি তার জীবনহানির আশঙ্কার কথা উল্লেখ করেন। চিঠিতে তিনি জানিয়েছিলেন, তার গাড়ির ব্রেক কেটে দেওয়া হতে পারে। ২০০৩ সালে চিঠিটি প্রকাশিত হয় এবং বিশ্বের আগ্রহ ও বিতর্ক আরও বেড়ে যায়।
২০০৪ সালে ব্রিটিশ মেট্রোপলিটন পুলিশ ‘অপারেশন পেজেট’ নামে একটি তদন্ত শুরু করে। ১৭৫টি ষড়যন্ত্রতত্ত্ব খতিয়ে দেখার পরও সরকারি প্রতিবেদনে বলা হয়, ডায়ানার মৃত্যু দুর্ঘটনা—কোনও ষড়যন্ত্রের প্রমাণ মেলেনি।