চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার আবুতোরাব বাজারের নির্মাণসামগ্রীর দোকান কর্মচারী সানি বড়ুয়া পরিবারের একমাত্র ভরসা ছিলেন। স্ত্রী, ছোট মেয়ে ও বৃদ্ধ মা-বাবাকে নিয়ে ছিল তাঁর সংসার। গত ১৭ জানুয়ারি তিনি দুই বন্ধুর সঙ্গে মোটরসাইকেলে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সুফিয়া রাস্তার মাথা এলাকায় দ্রুতগতির যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় প্রাণ হারান। সড়ক দুর্ঘটনায় সংসারের হাল ধরা এই মানুষটির মৃত্যুতে তাঁর পরিবারে নেমে আসে বিপর্যয়।
মিরসরাই উপজেলায় সানির পরিবারের মতো আরও অনেক পরিবার স্বজন হারানোর শোকে ভুগছে। পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত গত এক বছরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাই অংশে মোট ৮২টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় ৪২ জন নিহত ও ১৩৪ জন আহত হয়েছেন। তথ্য এসেছে উপজেলার জোরারগঞ্জ ও কুমিরা হাইওয়ে থানা, স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস এবং গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৮২টি দুর্ঘটনার মধ্যে প্রায় ৬৬ শতাংশের কারণ মালবাহী ট্রাক ও লরি। এসব ভারী যানবাহনের সংঘর্ষ ও উল্টে যাওয়ার ঘটনায় প্রাণ হারান অন্তত ১৭ জন। একই সময়ে মহাসড়কে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটে ১১টি, এতে নিহত হয়েছেন ৭ জন। সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন আরও ৪ জন এবং যাত্রীবাহী বাসের দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৪ জন। এছাড়া রাস্তা পারাপারের সময় অন্তত ১০ জন পথচারীর মৃত্যু হয়েছে।
হাইওয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, মিরসরাইয়ের বড়দারগারহাট থেকে ধুমঘাট সেতু পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার এলাকায় সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে। রাস্তার গর্ত ও ত্রুটি, ইউটার্নে গাড়ি থামিয়ে রাখা, বেপরোয়া গতি, চালকের চোখে ঘুম, ট্রাফিক আইন না মানা এবং সিএনজি অটোরিকশার অবৈধ চলাচল—এসব কারণকে দায়ী করা হয়েছে।
জোরারগঞ্জ হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক বোরহান উদ্দিন বলেন, “মহাসড়কে অনেক সময় কাভার্ড ভ্যান ও লরি অবৈধভাবে পার্কিং করে রাখা হয়। এতে দ্রুতগামী ট্রাক-লরি ওই গাড়িগুলিকে ধাক্কা দিয়ে দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে।”
বারইয়ারহাট ফায়ার সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন জানান, অনেক দুর্ঘটনা ঘটে থেমে থাকা গাড়িতে পেছন থেকে ধাক্কা লাগার কারণে। চালকের চোখে ঘুম বা গাড়ির যন্ত্রাংশ মেরামতের সময় থেমে থাকা গাড়ি অনেকে খেয়াল করেন না