রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলার দরবারে সহিংস হামলার ঘটনায় একজন নিহত ও অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। শুক্রবার জুমার নামাজের পর বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ ঘটে।
হামলাকারীরা শরিয়ত পরিপন্থীভাবে দাফনের অভিযোগ তুলে দরবারে হামলা চালান। একপর্যায়ে দরবার ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পর নুরাল পাগলার লাশ কবর থেকে তুলে গোয়ালন্দ পদ্মার মোড় এলাকায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
সংঘর্ষে অন্তত ১০–১২ জন পুলিশ সদস্যসহ অর্ধশতাধিক আহত হন। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুরাল পাগলার ভক্ত রাসেল মোল্লা মারা যান। এছাড়া পুলিশের দুটি গাড়ি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সেলিম মোল্লা বাদী হয়ে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করেছেন। তবে শনিবার সকাল পর্যন্ত কোনো গ্রেপ্তার হয়নি বলে নিশ্চিত করেছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাকিবুল ইসলাম।
শনিবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, নুরাল পাগলার দরবার এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। তিনতলা ও দোতলা দুটি ভবন সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়েছে, ভেতরে ছড়িয়ে আছে ধ্বংসস্তূপ। আশপাশে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা মালামাল উৎসুক জনতা কুড়িয়ে নিচ্ছেন, পুলিশ তাদের সরিয়ে দিচ্ছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ২৩ আগস্ট বার্ধক্যে নুরাল পাগলা মারা গেলে ভক্তরা বিশেষ কায়দায় দরবার চত্বরে তাঁর লাশ দাফন করেন। এ নিয়ে স্থানীয় ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটি আপত্তি জানায় এবং কবর সমতল করার দাবি তোলে। প্রশাসনের সঙ্গে একাধিক বৈঠক হলেও সমাধান হয়নি। সর্বশেষ কমিটি বৃহস্পতিবারের মধ্যে দাবি মানার আল্টিমেটাম দেয় এবং শুক্রবার জুমার পর ‘মার্চ ফর গোয়ালন্দ’ কর্মসূচির ঘোষণা দেয়।
বিক্ষোভ সমাবেশ চলাকালে উত্তেজিত জনতা দরবারে হামলা চালায়। সংঘর্ষে ভক্ত ও হামলাকারী পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল ছোড়া হয়, পরে অগ্নিসংযোগ ও লাশ উত্তোলনের ঘটনা ঘটে।
ঘটনার পর থেকে এলাকায় ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত নুরাল পাগলার পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো লিখিত অভিযোগ জমা দেওয়া হয়নি।