ঢাকা | , ১২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সুন্দরবনের জীবনের গল্প: বাঘের ভয়, কুমিরের আতঙ্ক আর মাছ ধরার লড়াই

Jashore Now
নিউজ প্রকাশের তারিখ : Sep 6, 2025 ইং
ছবির ক্যাপশন: সুন্দরবনের জেলে নূরুল ইসলাম সরদার: জীবনের অনিশ্চয়তা আর সংগ্রামের গল্প। ছবির ক্যাপশন: সুন্দরবনের জেলে নূরুল ইসলাম সরদার: জীবনের অনিশ্চয়তা আর সংগ্রামের গল্প।
ad728

সুন্দরবনসংলগ্ন কয়রার ৪ নম্বর গ্রামে জন্ম নেন নূরুল ইসলাম সরদার। এখন তাঁর বয়স প্রায় ৬০। ছোটবেলা থেকেই বাপ-চাচাদের সঙ্গে বনে যেতেন তিনি, শিখেছেন মাছ ধরা। সময়ের সঙ্গে সেটিই তাঁর জীবনের পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাছ বিক্রির টাকায় গড়ে তুলেছেন ঘর, জাল আর নৌকা।

তবে জীবনের এই পেশায় অনিশ্চয়তা নিত্যসঙ্গী। তিন মাস বন বন্ধ থাকায় পরিবার চালাতে ঋণ নিতে হয়েছে তাঁকে। আবারও নৌকা ও জাল ঠিকঠাক করে সাত–আট দিনের জন্য রওনা হয়েছেন সুন্দরবনের গভীরে।

নূরুল ইসলাম বলেন, “সুন্দরবনে আমাদের জীবন বড় অনিশ্চিত। কতবার যে বাঘের মুখোমুখি হয়েছি, তার হিসাব নেই। রাতে নৌকায় শুয়ে থেকেও বাঘের গর্জন শুনেছি। খাল ও নদীর চরে কুমিরেরও দেখা মেলে। সব ভয় মেনে নিয়েই এ পেশায় আছি।”

তিনি জানান, তাঁর চাচা বারিক সরদার বাঘের আক্রমণে প্রাণ হারান। কুকুমারী খালে রান্নার কাঠ আনতে গিয়ে চাচার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঘ। নূরুল ইসলাম তখন কাছে ছিলেন। ছুটে গিয়ে দেখেন, বাঘের নিচে চাচার নিথর দেহ। ভয়ে কিছুই করার ছিল না। পরে আশপাশের জেলেদের ডেকে সবাই মিলে গিয়ে বাঘকে তাড়ানো হলেও অর্ধেক দেহ তখন আর অবশিষ্ট ছিল না।

নূরুল ইসলামের ভাষায়, “সেদিনের কথা মনে পড়লে আজও বুক কাঁপে, শরীর ঘেমে যায়।”

সুন্দরবনে মাছ ধরার জন্য জেলেদের নানা প্রস্তুতি নিতে হয়। নৌকায় চাল, ডাল, তরিতরকারি, পানীয় জল মজুত করে নিয়ে যান তাঁরা। রান্না থেকে ঘুম—সবই হয় নৌকাতেই। মাছ সংরক্ষণের জন্য বরফও নিতে হয়, কারণ অন্তত আট দিন পর ফেরার পরিকল্পনা থাকে।

তবে মাছ ধরার হিসাব চলে প্রকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে। অমাবস্যা বা পূর্ণিমার জোয়ার-ভাটাই ঠিক করে দেয় দিনপঞ্জি। কখনো জালে ওঠে চিংড়ি, ভেটকি বা দাতিনা, আবার কখনো হাতে আসে সামান্যই।

তবুও প্রতিদিন পরিবারের লোকজন অপেক্ষা করে থাকেন—সুন্দরবনের ভয়াবহতার ভেতর থেকে তাঁদের প্রিয়জন যেন আল্লাহর কৃপায় জীবিত ফিরে আসতে পারেন।


নিউজটি পোস্ট করেছেন : Jashore Now

কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ