বাংলাদেশের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী, গীতিকার ও অভিনেতা তাহসান খান তাঁর দীর্ঘ সংগীতজীবনের ইতি টানার ইঙ্গিত দিয়েছেন। ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে সংগীত জগতে সক্রিয় থাকা এই শিল্পী বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া সফরে রয়েছেন। এই সফরই হতে পারে তাঁর শেষ আন্তর্জাতিক সংগীত ট্যুর।
মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত এক কনসার্টে গান পরিবেশনের সময় হঠাৎ করেই তাহসান ঘোষণা দেন, “অনেক জায়গায় লেখা হচ্ছে, এটা আমার শেষ কনসার্ট। শেষ কনসার্ট না, শেষ ট্যুর। আস্তে আস্তে সংগীতজীবনের হয়তো ইতি টানব। এটা ন্যাচারাল। সারাজীবন কি এভাবে মঞ্চে দাঁড়িয়ে লাফালাফি করা যায়! মেয়ে বড় হয়ে যাচ্ছে, এখন যদি মঞ্চে দাঁড়িয়ে গাই—‘দূরে তুমি দাঁড়িয়ে’—দেখতে কেমন লাগে।”
এই ঘোষণা শুনে উপস্থিত হাজারো দর্শক হতবাক হয়ে পড়েন। অনেকেই আবেগ ধরে রাখতে না পেরে চোখের জল ফেলেন। তবে তাহসান গান থামাননি; বরং আরও কয়েকটি জনপ্রিয় গান পরিবেশন করে কনসার্ট শেষ করেন।
তাহসানের ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট—যেগুলোতে লাখো ভক্ত অনুসরণ করতেন—সম্প্রতি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে তিনি প্রকাশ্যে কিছু বলেননি। ধারণা করা হচ্ছে, নিজের ব্যক্তিগত সময় ও জীবনকে প্রাধান্য দিতেই তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ঘটনার পরদিন তাহসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সংক্ষেপে বলেন, “একটা সাধারণ জীবনের আশায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” তিনি স্পষ্ট করেছেন, সংগীতচর্চা তাঁর কাছে সব সময় আবেগের জায়গা হলেও এখন বয়স, সময় এবং কন্যার বেড়ে ওঠা তাঁর অগ্রাধিকার পাল্টে দিয়েছে।
তাহসান ২০০০-এর দশকে ব্যান্ড ‘ব্ল্যাক’-এর মাধ্যমে সংগীতজগতে প্রবেশ করেন। ২০০২ সালে ‘আমার পৃথিবী’ অ্যালবামের মাধ্যমে তরুণদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন। এরপর এককভাবে তিনি উপহার দিয়েছেন অসংখ্য জনপ্রিয় গান—যেমন “চাই না ভাবিস তুমি”, “ভবঘুরে”, “ভুল”, “দূরে তুমি দাঁড়িয়ে” ইত্যাদি।
তাহসানের ঘোষণার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভক্তদের প্রতিক্রিয়া ছিল আবেগময়। অনেকেই লিখেছেন, “আমরা প্রস্তুত ছিলাম না তাঁকে বিদায় জানানোর জন্য।” কেউ কেউ আশা প্রকাশ করেছেন যে, কিছুদিন পর তিনি আবার ফিরে আসবেন। তবে তাহসান নিজেই জানিয়েছেন, গানে ফেরার সম্ভাবনা নেই।
অস্ট্রেলিয়া সফরের শেষ কনসার্ট অনুষ্ঠিত হবে পার্থ শহরে। এই অনুষ্ঠান দিয়েই তিনি মঞ্চ থেকে ধীরে ধীরে বিদায় নেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তাহসানের বিদায় শুধু একটি ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নয়, এটি বাংলা সংগীতের একটি যুগের অবসানও বটে। তবে মঞ্চ ছেড়ে গেলেও তাঁর গান, তাঁর আবেগ, ও তাঁর ছাপ থেকে যাবে কোটি ভক্তের হৃদয়ে। সংগীতের মাধ্যমে তিনি যেমন নিজেকে প্রকাশ করেছেন, এবার হয়তো তিনি নিজেকে খুঁজে নিচ্ছেন এক নতুন পরিসরে—একজন বাবা, একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে।
তাঁর এই নতুন যাত্রাপথের জন্য রইল শুভকামনা।