চট্টগ্রামের মৌলভীবাজারে বসতঘরে আগুনে নারী নিহত, পরিবারের তিনজন দগ্ধ
চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানার মৌলভীবাজার এলাকায় মঙ্গলবার ভোরে একটি বসতঘরে আগুন লেগে গীতা রানি ঘোষ নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। একই ঘটনায় তাঁর পরিবারের আরও তিন সদস্য দগ্ধ হয়েছেন। দগ্ধরা বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ফায়ার সার্ভিসের প্রাথমিক ধারণা অনুযায়ী, আগুনটি বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে লেগেছে।
বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানায়, রাত পৌনে তিনটার দিকে বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে ওই বসতঘরে আগুনের সূত্রপাত হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করে প্রায় এক ঘণ্টা। ভোর ৪টা ১০ মিনিটের দিকে আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসে।
ফায়ার সার্ভিসের কালুরঘাট স্টেশনের জ্যেষ্ঠ স্টেশন অফিসার মো. ফখরুদ্দিন প্রথম আলোকে জানান, আগুনে ঘরের ভেতর থাকা গীতা রানি ঘোষ মারা গেছেন। এছাড়া তাঁর পরিবারের আরও তিন সদস্য—বিপ্লব ঘোষ, কণা ঘোষ এবং শশী ঘোষ—দগ্ধ হয়েছেন। তাঁরা বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন এবং চিকিৎসা চলছে।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, আগুনে বসতঘরের প্রায় ১০ লাখ টাকার মালামাল পুড়ে গেছে। ধ্বংসস্তূপে থাকা জিনিসপত্রের মধ্যে রয়েছে ফার্নিচার, বিদ্যুৎ সংক্রান্ত যন্ত্রাংশ, পোশাক ও অন্যান্য দৈনন্দিন ব্যবহারের জিনিসপত্র।
প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করা হচ্ছে, আগুনের কারণ বৈদ্যুতিক গোলযোগ। তবে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা আরও জানিয়েছেন যে, চূড়ান্ত কারণ নিশ্চিত করতে আগামীতেও তদন্ত চলবে। তাঁরা বলেন, “আমরা আগুন লাগার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করতে ঘটনাস্থল থেকে সমস্ত প্রমাণ সংগ্রহ করছি। বৈদ্যুতিক সংযোগ, ওয়্যারিং ও অন্য কোনও ত্রুটি থাকলে তা চূড়ান্তভাবে যাচাই করা হবে।”
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে জানা গেছে, আগুন লাগার সময় পরিবারটি ঘুমাচ্ছিল। অল্প সময়ের মধ্যেই আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পাশের বাড়ির লোকজন আগুনের শব্দ ও ধোঁয়া দেখে পরিস্থিতি বুঝতে পেরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়। তারা বলেন, “আমরা ভোরে হঠাৎ আগুন দেখতে পেয়ে সাহায্য করার চেষ্টা করি, কিন্তু আগুন এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল যে মূল ঘরে থাকা মানুষদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।”
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা মো. ফখরুদ্দিন আরও জানান, আগুনের সময় স্থানীয় ফায়ার স্টেশনের দুটি দল কাজ করেছে। প্রথমে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা এবং পরবর্তীতে ঘরের ভিতরের ধ্বংসস্তূপ পরীক্ষা করা হয়। তিনি বলেন, “আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর আমরা তাপমাত্রা কমানো এবং পুনরায় বিস্তার রোধ করার কাজ করি। এটি একটি দ্রুতগতির এবং সঠিক সময়ে নেওয়া পদক্ষেপ ছিল।”
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, দগ্ধরা গুরুতর অবস্থায় আছেন। তাঁদের শরীরের বিভিন্ন অংশে চামড়া পুড়ে গেছে এবং শ্বাসনালি ও ফুসফুসে ধোঁয়ার প্রভাব পড়েছে। চিকিৎসকরা দগ্ধদের নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা বলেন, “আমরা তাদের চিকিৎসা দিচ্ছি। পরিস্থিতি এখনও স্থিতিশীল নয়, তবে আমাদের সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিবারকে প্রাথমিক সহায়তা দেওয়ারও কথা বলা হয়েছে। স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, নিহত ও দগ্ধদের পরিবারের জন্য সরকারি সাহায্য এবং প্রাথমিক ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া নিরাপত্তা ও আগুনের পুনরাবৃত্তি রোধে এলাকাজুড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ পরীক্ষা করা হবে।
চট্টগ্রামে বসতঘরে আগুন লাগার এই ঘটনায় পুনরায় সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে আগুনের ঝুঁকি কমানোর জন্য নিয়মিত বৈদ্যুতিক লাইন ও যন্ত্রপাতি পরীক্ষা করা প্রয়োজন। পাশাপাশি, প্রতিটি পরিবারের উচিত আগুন লাগার সময় দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানানো এবং জরুরি বাহিনীকে অবিলম্বে জানানো।
এই ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে শোক ও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, আগুনের শোরগোল ও ধোঁয়া দেখে পরিবারকে সাহায্য করার চেষ্টা করেছিলেন। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের তৎপরতা না থাকলে দুর্ঘটনা আরও ভয়াবহ হতে পারত।
ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে সতর্কতা জোরদার করার কথাও জানিয়েছে। স্থানীয়রা সবাই আগুন লাগার পরিপ্রেক্ষিতে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন।
চট্টগ্রামের মৌলভীবাজার এলাকায় মঙ্গলবার ভোরে ঘটা এই আগুনের ঘটনায় এক নারীর মৃত্যু এবং পরিবারের তিনজনের দগ্ধ হওয়ার ঘটনা স্থানীয় প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস এবং চিকিৎসক সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। পুরো এলাকায় পুনরায় নিরাপত্তা ও সতর্কতা জোরদার করা হয়েছে।