যশোরের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ নাজমুল আলমসহ মোট ২৩০ জন বিচারককে একযোগে বদলির আদেশ দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। সোমবার (২৫ আগস্ট) আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের চারটি পৃথক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়। এই বদলির প্রক্রিয়া দেশের বিচার বিভাগের প্রশাসনিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে করা হয়েছে।
বদলিকৃত বিচারকদের মধ্যে যশোরের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজকে রাজশাহীর মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এটি মানব পাচার প্রতিরোধ ও অপরাধ দমন কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে নেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে। বর্তমানে যশোর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে নতুন কোনো বিচারক নিয়োগ পাওয়া যায়নি।
প্রজ্ঞাপনের তথ্য অনুযায়ী, বদলিকৃত বিচারকদের মধ্যে রয়েছেন ৪১ জন জেলা ও দায়রা জজ, ৫৩ জন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ, ৪০ জন যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ এবং জুডিশিয়াল সার্ভিসের সিনিয়র সহকারী ও সহকারী জজ পর্যায়ের ৯৬ জন সদস্য। এই বড় ধরনের বদলি দেশের বিচার বিভাগের কার্যক্রমে নতুন গতি আনবে এবং বিভিন্ন জেলার বিচার প্রক্রিয়াকে আরও কার্যকর করতে সাহায্য করবে।
বদলির এই সিদ্ধান্তটি দেশে বিচার প্রশাসনের স্বচ্ছতা, দক্ষতা এবং ন্যায়বিচারের মান উন্নয়নের জন্য নেওয়া হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় দীর্ঘদিন ধরে বিচারক নিয়োগ এবং বদলির বিষয়টি আদালতের কাজের গতিশীলতা প্রভাবিত করছে। এ কারণে নিয়মিত বিচারক বদলির মাধ্যমে জেলা আদালতের কার্যক্রমে সমন্বয় সাধন করা হয়।
যশোরের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ নাজমুল আলম এর আগে ২০২৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে আইন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (প্রশাসন-১) মোহাম্মদ ওসমান হায়দারের স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে যশোর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বদলি হন। পরবর্তীতে ২৩ ফেব্রুয়ারি তিনি তৎকালীন জেলা ও দায়রা জজ মো. ইখতিয়ারুল ইসলাম মল্লিকের কাছ থেকে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এর মাধ্যমে যশোর জেলা আদালতের নেতৃত্বে নতুন পরিবর্তন আসে।
শেখ নাজমুল আলমের বদলি রাজশাহী ট্রাইব্যুনালে গুরুত্বপূর্ণ মানব পাচার মামলার কার্যক্রমে ভূমিকা রাখবে। মানব পাচার প্রতিরোধ ও অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল দেশের আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিচারক বদলির মাধ্যমে আদালতের কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী ও দ্রুততর করার লক্ষ্য রয়েছে।
বদলিকৃত অন্যান্য বিচারকও বিভিন্ন জেলার জেলা ও দায়রা জজ আদালত, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালত এবং জুডিশিয়াল সার্ভিসের অন্যান্য স্তরে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। এ ধরনের বদলির ফলে দেশের বিচার বিভাগের দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে এবং আদালতের সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়ায় সমন্বয় তৈরি হবে।
আইন ও বিচার বিভাগের এই পদক্ষেপ বিচার বিভাগের স্বচ্ছতা এবং দক্ষতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এছাড়া, বদলিকৃত বিচারকরা নতুন দায়িত্ব গ্রহণের মাধ্যমে বিভিন্ন জেলার বিচার কার্যক্রমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে সক্ষম হবেন।
বদলির মাধ্যমে বিচার বিভাগ দেশের বিভিন্ন জেলায় সমন্বিতভাবে কাজ করার সুযোগ পাবে। বিচারকদের বদলি নিয়মিতভাবে করা হয় যাতে তারা নতুন পরিবেশে কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন এবং বিভিন্ন জেলার আদালতের কার্যক্রমে উন্নতি আনতে পারেন।
সর্বশেষ, এই বড় ধরনের বদলি পদক্ষেপ দেশের বিচার বিভাগের কার্যক্রমকে আরও কার্যকর, দ্রুত এবং স্বচ্ছ করতে সহায়ক হবে। ২৩ ফেব্রুয়ারি শেখ নাজমুল আলম যশোর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে দায়িত্বভার গ্রহণের পর থেকে তিনি জেলা আদালতের বিভিন্ন মামলার কার্যক্রম তদারকি করেছেন। এখন তিনি রাজশাহীর মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন, যা দেশের ন্যায়বিচার প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
এই বদলি দেশের বিচার বিভাগের প্রশাসনিক কার্যক্রম এবং বিচারকের দক্ষতা বৃদ্ধির অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন জেলার আদালতের কার্যক্রমে সমন্বয় ও উন্নতি আনার জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এভাবে বিচার বিভাগের কার্যক্রমে নতুন গতি আসবে এবং জনগণের কাছে দ্রুত এবং নিরপেক্ষ ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে।