ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে বামপন্থী সাতটি ছাত্রসংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত প্রতিরোধ পর্ষদ বৈচিত্র্যময় প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে। ২৮টি পদের মধ্যে নারী, সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী থেকে প্রার্থী দেওয়া হয়েছে ১৬টিতে। এর বাইরে একজন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন প্রার্থীও রয়েছেন। এবারের স্লোগান রাখা হয়েছে— “সমতায়, প্রতিরোধে নিরাপদ ক্যাম্পাস”।
প্রতিরোধ পর্ষদে সর্বাধিক ১২ নারী প্রার্থী রয়েছেন, যা অন্য যেকোনো প্যানেলের তুলনায় বেশি। সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর চার প্রার্থীও আছেন তালিকায়। জোটের নেতাদের মতে, বৈচিত্র্য, প্রার্থীদের পরিচিতি এবং ক্যাম্পাসে তাঁদের ধারাবাহিক প্রতিবাদী ভূমিকা ভোটে সাফল্য এনে দিতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বামপন্থী ছাত্ররাজনীতির দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। স্বাধীনতার আগে ও পরে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে বামধারার ছাত্রসংগঠনগুলো ভালো ফল করেছে। ছাত্র ইউনিয়নের প্রার্থী চারবার ভিপি ও চারবার জিএস পদে জয়ী হয়েছেন। জাসদ ছাত্রলীগ ও বাসদ ছাত্রলীগও কয়েক দফায় শীর্ষ পদে জয় পেয়েছে। তবে সর্বশেষ ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনে বামপন্থীরা প্রত্যাশিত ফল করতে পারেনি।
বর্তমানে সক্রিয় ১০টি বামপন্থী ছাত্রসংগঠনের মধ্যে সাতটি মিলে প্রতিরোধ পর্ষদ গঠন করেছে। এগুলো হলো— ছাত্র ইউনিয়ন (তামজিদ-শিমুল), সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী), বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (ইউপিডিএফ), ছাত্র ফেডারেশন (জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল) ও বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলন। অন্যদিকে ছাত্র ইউনিয়ন (মাহির-বাহাউদ্দিন), সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (বাসদ) ও বিসিএল (বাংলাদেশ জাসদ) যৌথভাবে ‘অপরাজেয় ৭১ ও অদম্য ২৪’ নামে আলাদা একটি প্যানেল দিয়েছে।
প্রতিরোধ পর্ষদের ভিপি প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন শেখ তাসনিম আফরোজ (ইমি)। তিনি কোনো সংগঠনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত না থাকলেও ২০১৯ সালে শামসুন নাহার হল সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। জিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন মেঘমল্লার বসু, যিনি প্রতিবাদী ভূমিকা ও বিতার্কিক হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত মুখ। সম্প্রতি অসুস্থ হয়ে পড়ায় তিনি সরাসরি প্রচার থেকে সাময়িক বিরতি নিয়েছেন।
এজিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক জাবির আহমেদ জুবেল। মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক মোজাম্মেল হক। কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে রয়েছেন নূজিয়া হাসিন, যিনি বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি।
বামপন্থীরা আশা করছে, বৈচিত্র্যময় এই প্যানেলই ক্যাম্পাসে সমতার বার্তা ছড়িয়ে ভোটে পুনরায় নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে পারবে।