চাকরি না করে মাছ চাষ করার সিদ্ধান্তে পরিবার–প্রতিবেশীদের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার শিকার হয়েছিলেন কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার সিংগুলা দিঘিরপাড় গ্রামের যুবক রহমত আলী সরকার। একসময় তাঁকে নিয়ে অনেকে উপহাস করলেও এখন তাঁর সফলতায় ঈর্ষণীয় পরিবর্তন এসেছে।
বর্তমানে তিনি প্রায় ৪০ হেক্টর জমিতে ২০টি পুকুর ও চারটি প্লাবনভূমিতে মাছ চাষ করছেন। তাঁর প্রতিষ্ঠান ‘রহমত ফিশারিজ’-এ পাঙাশ, কই, শিং, বাটা, রুই, কাতলা, মৃগেল, তেলাপিয়া ও কার্পজাতীয় মাছ উৎপাদিত হয়। এসব থেকে প্রতিবছর চার কোটি টাকার বেশি আয় করছেন তিনি।
কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্যও তিনি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। বর্তমানে তাঁর মৎস্য প্রকল্পে নিয়মিত কাজ করছেন ৬০ জন শ্রমিক, যা সমানসংখ্যক পরিবারের জীবিকার উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জাতীয় মৎস্য খাতে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে সম্প্রতি রাজধানীর চীন মৈত্রী সম্মেলনকেন্দ্রে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহে পুরস্কার গ্রহণ করেন রহমত আলী। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর হাতে এ পুরস্কার তুলে দেন। এর আগে উপজেলা ও বিভাগীয় পর্যায়েও একাধিকবার পুরস্কৃত হয়েছেন তিনি।
নিজের যাত্রার গল্প স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে রহমত আলী বলেন, “১৯৯৮ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর চাকরিতে আগ্রহ না পেয়ে টানা দুই বছর মাছ চাষের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম। ২০০০ সালে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে একটি ছোট ডোবা ইজারা নিয়ে শুরু করি। প্রথম বছরেই লাভবান হয়ে ধাপে ধাপে এগিয়েছি।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে তিনি জানান, আশপাশের পরিত্যক্ত জমি কাজে লাগিয়ে আরও মৎস্য প্রকল্প গড়ে তুলতে চান। ইতিমধ্যে তিনি কম জায়গায় অধিক উৎপাদনের কৌশল নিয়েও প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
কেবল উদ্যোক্তা হিসেবেই নয়, সমাজসেবাতেও তিনি প্রশংসিত। মেধাবী গরিব শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান, অসহায় মানুষকে সাহায্য এবং উন্মুক্ত জলাশয়ে রেণুপোনা ছাড়াসহ নানা উদ্যোগ তাঁর মানবিক দিক তুলে ধরেছে। স্থানীয় শিক্ষক আবদুল মোমেন ভূঁইয়া বলেন, “এভাবে সমাজের প্রত্যেকে এগিয়ে এলে শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়বে না।
তরুণদের উদ্যোক্তা হতে উৎসাহিত করে রহমত আলী বলেন, “চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোগ নিলে নিজে স্বাবলম্বী হওয়া যায়, আবার অন্যদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি হয়।
উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা সাবিনা ইয়াছমিন চৌধুরী বলেন, “রহমত ফিশারিজ এখন অনেকের জন্যই অনুকরণীয় উদাহরণ। তরুণদের তাঁর মতো এগিয়ে আসা উচিত।