একসময় রংপুরের পাড়া-মহল্লায় পরিচিত মুখ ছিলেন প্রদীপ লাল দাস। জুতা সেলাই করে সংসার চালাতেন তিনি। কিন্তু পাঁচ বছর আগে এক দুর্ঘটনায় পা হারিয়ে জীবনের গতি বদলে যায়। মানুষের সহায়তায় একটি ব্যাটারিচালিত ভ্যান কিনে তিনি আবারও নতুন করে সংসার চালানোর চেষ্টা করেছিলেন।
তবে ভাগ্য আর সহায় হলো না। গত ৯ আগস্ট রাতে ব্যাটারিচালিত ভ্যান নিয়ে শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার পথে তারাগঞ্জ উপজেলার সয়ার ইউনিয়নের বটতলায় তাঁকে চোর সন্দেহে আটক করে স্থানীয়রা। কিছুক্ষণের মধ্যে ‘মব’ তৈরি হয়ে প্রদীপ ও তাঁর মামাশ্বশুর রূপলাল দাসকে পিটিয়ে হত্যা করে।
প্রদীপ দাসের বাড়ি রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার ছড়ান বালুয়া খামার মকিমপুর গ্রামে। তাঁর মৃত্যুর পর স্ত্রী দুলালী রানী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। দুলালী রানী বলেন, “এক পাও দিয়া ভ্যান চালে হামাক কামাই করি খিলাইছে। মোর স্বামী ভালো মানুষ। তাক চোর সাজর মারি ফেলছে। অন্যের জমিতে ঘর, স্বামী ছাড়া কষ্টে সংসার চলোছে।
প্রদীপের বড় ছেলে দুলাল দাস এসএসসি পাস করার পর অভাবের কারণে পড়াশোনা চালাতে পারেননি। এখন দিনমজুরির কাজে নেমেছেন। ছোট ছেলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়লেও পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। মেয়ে পলাশী রানী কান্নাজড়ানো কণ্ঠে বলেন, “আমার বাবাকে বিনা দোষে মেরে ফেলা হয়েছে। ছোট ভাইটা যেন পড়তে পারে, এই ব্যবস্থা করবেন।
প্রতিবেশীরাও জানান, প্রদীপ অনেক কষ্টে সন্তানদের পড়াশোনা করাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এখন তাঁর স্বপ্ন ভেঙে গেছে।
এ ঘটনায় উপজেলা প্রশাসন প্রদীপের পরিবারকে ৩০ হাজার টাকা সহায়তা দিয়েছে। তাঁর স্ত্রীকে বিধবা ভাতা এবং সন্তানদের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করার কথাও জানিয়েছে প্রশাসন।
তারাগঞ্জ থানার ওসি এম এ ফারুক জানান, প্রদীপের ভ্যানটি মামলার আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং অন্য আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে।