ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু নির্বাচনে শুরু থেকেই ছাত্রদলকে বারবার একটি প্রশ্নের জবাব দিতে হচ্ছে—তারা ক্ষমতায় এলে কি আবার গণরুম-গেস্টরুম সংস্কৃতি ফিরবে? এ নিয়ে চলমান বিতর্কের জবাব ছাত্রদল তাদের নির্বাচনী ইশতেহারের প্রথম দফাতেই দিয়েছে।
ইশতেহারে ছাত্রদল জানিয়েছে, জোরপূর্বক রাজনৈতিক কর্মসূচি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দখলদারত্ব এবং বিশেষ করে গেস্টরুম-গণরুম সংস্কৃতি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা হবে। হলে হলে প্রচারে গিয়ে প্রার্থীরাও শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করছেন যে, এ ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের চর্চা আর কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরতে দেওয়া হবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে আবাসন সংকটের কারণে ‘গণরুম’ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে, যেখানে একটি কক্ষে গাদাগাদি করে শিক্ষার্থীদের থাকতে হতো। অন্যদিকে ‘গেস্টরুম সংস্কৃতি’র নামে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালানো হতো। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের নেতারাই সাধারণত এসব কার্যক্রমে জড়িত থাকতেন। আওয়ামী লীগের দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে বহু শিক্ষার্থী গেস্টরুম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
গত জুলাই মাসের গণ–অভ্যুত্থানের পর এই সংস্কৃতির অবসান ঘটে। বর্তমানে কনিষ্ঠ শিক্ষার্থীরা নিয়ম মেনে হলে আসন পাচ্ছেন এবং কোনো সংগঠনের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক নয়। তবে কিছু সংগঠন নির্বাচনী প্রচারে ছাত্রদলকে ঘিরে আবারও গণরুম-গেস্টরুম সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনার অভিযোগ তুলছে।
ভিপি পদপ্রার্থী মো. আবিদুল ইসলাম খান বলেন, “কিছু সংগঠন সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। ছাত্রদল গণরুম-গেস্টরুম সংস্কৃতির মূল উৎপাটন করবে।”
ছাত্রদলের নেতাদের দাবি, এবারের প্রচারে তারা ক্রমেই সুবিধাজনক অবস্থানে পৌঁছাচ্ছেন। ১৯৯০ সালের ডাকসু নির্বাচনে যেমন ছাত্রদল জয়ী হয়েছিল, এবারও “নব্বইয়ের হাওয়ার পুনরাবৃত্তি” ঘটবে বলে তাদের বিশ্বাস।
ছাত্রদলের হিসাব অনুযায়ী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএনপি–সমর্থক পরিবারের প্রায় সাত হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। তাঁদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে সংগঠনটি। এছাড়া ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম কুমিল্লার সন্তান হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত প্রায় দুই হাজার কুমিল্লার শিক্ষার্থীর ভোটও তিনি পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
জিএস পদপ্রার্থী শেখ তানভীর বারী খুলনার ছেলে। ছাত্রদলের ধারণা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খুলনা বিভাগের প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছেন, যাদের বড় একটি অংশের ভোট তিনি পাবেন।
এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ৩৯ হাজার ৮৭৪ জন। এর মধ্যে ছাত্রী ভোটার ১৮ হাজার ৯৫৯ জন, যা প্রায় ৪৮ শতাংশ। তাই ছাত্রীদের ভোটকেই বড় ফ্যাক্টর হিসেবে দেখা হচ্ছে। ছাত্রদল তাদের ইশতেহারে নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, পোশাকের স্বাধীনতা, যৌন হয়রানি প্রতিরোধ এবং সান্ধ্য আইন বিলোপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
অন্যদিকে সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীদের বড় অংশ জগন্নাথ হলে থাকেন। এখানে ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ২২২ জন, যা মোট ভোটারের প্রায় ৬ শতাংশ। ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় এই হলের শিক্ষার্থী হওয়ায় সংগঠনটির প্রত্যাশা, এখান থেকেও উল্লেখযোগ্য ভোট তারা পাবে।
ডাকসুর পাশাপাশি ১৮টি হলে শুধুমাত্র ছাত্রদলই পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে ১৪টিতে পূর্ণাঙ্গ এবং ছাত্রীদের চারটি হলে আংশিক প্যানেল আছে। ছাত্রদলের ধারণা, জগন্নাথ হল, মুহসীন হল, বিজয় একাত্তর হল, বঙ্গবন্ধু হল ও স্যার এ এফ রহমান হলে তাদের প্রার্থীরা সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন। তবে ছাত্রীদের পাঁচটি হলে ফলাফল নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা রয়েছে।
জিএস প্রার্থী শেখ তানভীর বারী বলেন, “আমাদের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চলছে। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি, এবারের ডাকসু নির্বাচনে নব্বইয়ের পুনরাবৃত্তি হবে এবং ছাত্রদল সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষার্থীর ম্যান্ডেট পাবে।”