জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন প্রশ্নে গণভোট একসঙ্গে করার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা চলছে। গতকাল রোববার ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে এ বিষয়টি গুরুত্ব পায়। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে করা হলে ব্যয় কমবে এবং প্রক্রিয়াটি সহজ হবে। তবে জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজন করলে কিছু দল এটিকে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার কৌশল হিসেবে দেখতে পারে। এজন্য কমিশন বিষয়টি নিয়ে সতর্কভাবে আলোচনা করছে।
বৈঠকে উপস্থিত বিশেষজ্ঞরা গণভোট ছাড়াও রাষ্ট্রপতির প্রোক্লেমেশন, বিশেষ সাংবিধানিক ব্যবস্থা কিংবা সুপ্রিম কোর্টের রেফারেন্স নেওয়ার মতো বিকল্প উপায় নিয়েও মতামত দেন। তবে অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংবিধানসংক্রান্ত প্রস্তাব বাস্তবায়ন সম্ভব নয় বলে অভিমত এসেছে।
ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, “সনদ বাস্তবায়নের বিভিন্ন বিকল্প উপায় নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হচ্ছে। এ প্রক্রিয়া শেষে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হবে।”
সূত্র জানায়, ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ইতিমধ্যে প্রাথমিক ঐকমত্য গড়ে উঠেছে। এর ভিত্তিতে খসড়া ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ তৈরি হয়েছে। তবে বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারের অধ্যাদেশের মাধ্যমে আইনগত প্রস্তাব বাস্তবায়নের পক্ষে, জামায়াত গণভোট বা রাষ্ট্রপতির প্রোক্লেমেশনের মাধ্যমে বাস্তবায়ন চায়, আর এনসিপি গণপরিষদ গঠন করে বাস্তবায়নের প্রস্তাব দিয়েছে।
এদিকে, একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনের চিন্তার বিষয়টি কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ না করায় বিএনপি এখনো কোনো মন্তব্য করছে না। তবে জামায়াতে ইসলামী বলেছে, সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে হলে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠনের বিষয়ে জটিলতা তৈরি হতে পারে।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতেই তৈরি হচ্ছে এই জুলাই জাতীয় সনদ। রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তি ও মতামত পর্যালোচনার পর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হবে এবং দলগুলোর স্বাক্ষরের মাধ্যমে সনদ পূর্ণতা পাবে।