ঢাকা, মঙ্গলবার — ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিপুল পরিমাণ কোকেনসহ গায়ানার এক নারী যাত্রীকে আটক করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। জব্দ করা কোকেনের ওজন সাড়ে ৮ কেজি এবং এর আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ১৩০ কোটি টাকা।
আটক যাত্রীর নাম এম এস কারেন পেতুলা স্টাফেল। তিনি সোমবার গভীর রাতে দোহা থেকে কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে ঢাকায় আসেন। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে শুল্ক গোয়েন্দারা অভিযান চালিয়ে তাঁকে আটক করেন।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সোমবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে কাতার এয়ারওয়েজের উড়োজাহাজটি ঢাকায় অবতরণ করে। এর আগে অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে গোপন খবর আসে যে, ওই ফ্লাইটে থাকা এক যাত্রী বিপুল পরিমাণ মাদক বহন করছেন।
তথ্য পাওয়ার পর গোয়েন্দারা বিমানবন্দরে অবস্থান নেন এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে সতর্ক করেন। যাত্রী পেতুলা স্টাফেল বিমানবন্দরে নামার পর তাঁর পরিচয় নিশ্চিত করা হয়। পরে তাঁর লাগেজ স্ক্যান করে সন্দেহজনক বস্তু পাওয়া যায়।
স্ক্যানিংয়ের সময় স্টাফেলের ব্যাগ থেকে ২২টি ডিম্বাকৃতির ফয়েল মোড়ানো প্যাকেট উদ্ধার করা হয়। প্রতিটি প্যাকেট পরীক্ষা করে কোকেন পাওয়া যায়। উদ্ধার হওয়া মাদকের ওজন দাঁড়ায় ৮ কেজি ৫০০ গ্রাম।
অভিযান পরিচালনার সময় শুল্ক গোয়েন্দাদের পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। পরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) বিমানবন্দর ইউনিট নমুনা পরীক্ষা করে নিশ্চিত করে যে, জব্দকৃত পদার্থ আসল কোকেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পেতুলা স্টাফেলকে বিমানবন্দর থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। তাঁর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী মামলা দায়ের করা হচ্ছে।
শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর জানিয়েছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক যাত্রী কোকেন বহনের বিষয়টি স্বীকার করেননি। তবে তদন্তকারীরা মনে করছেন, তিনি একটি আন্তর্জাতিক চক্রের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ হয়ে কোকেন পাচার করছিলেন।
বাংলাদেশের প্রধান আন্তর্জাতিক প্রবেশদ্বার হিসেবে শাহজালাল বিমানবন্দর দীর্ঘদিন ধরেই আন্তর্জাতিক মাদক চক্রের টার্গেটে রয়েছে। আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকা থেকে আসা যাত্রীদের একটি অংশকে ব্যবহার করে মাদক ঢাকায় আনা হয় এবং এখান থেকে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে পাচার করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনের মতো উচ্চমূল্যের মাদক বাংলাদেশে খুব কম ধরা পড়ে। সাধারণত ইয়াবা বা হেরোইনের চালান ধরা পড়ে বেশি। তাই সাড়ে ৮ কেজি কোকেন জব্দ হওয়া একটি বড় ধরনের সাফল্য বলে বিবেচিত হচ্ছে।
বাংলাদেশে অতীতে কোকেন জব্দের কিছু বড় ঘটনা রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—
২০১৫ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে একটি কনটেইনার থেকে তরল কোকেন উদ্ধারের ঘটনা।
২০১৭ সালে ঢাকার কুর্মিটোলায় এক ব্যক্তির কাছ থেকে এক কেজির বেশি কোকেন উদ্ধার করা হয়।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কোকেনের চালান ধরা পড়ার ঘটনা তুলনামূলক কম হলেও আন্তর্জাতিক রুট ব্যবহার করে বাংলাদেশে মাদক আসছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে শাহজালাল বিমানবন্দরে ধরা পড়া সর্বশেষ চালানটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে।
জব্দ হওয়া সাড়ে ৮ কেজি কোকেনের আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য প্রায় ১৩০ কোটি টাকা বলে জানিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর। স্থানীয় বাজারে এই মাদকের মূল্য আরও বেশি হতে পারে।
কোকেন মূলত ধনী শ্রেণির মধ্যে বেশি ব্যবহৃত হয়। মাদক বিশেষজ্ঞদের মতে, এর আসক্তি ভয়াবহ এবং স্বাস্থ্যঝুঁকিও মারাত্মক। বাংলাদেশে কোকেনের চাহিদা তুলনামূলকভাবে কম হলেও আন্তর্জাতিক পাচার রুটে দেশটিকে ব্যবহার করা হচ্ছে।
পেতুলা স্টাফেলকে বিমানবন্দর থানায় হস্তান্তর করা হলে তাঁর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী মামলা করা হবে।
তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখবেন—
তিনি কাদের সহযোগিতায় বাংলাদেশে এসেছেন।
তাঁর গন্তব্য কোথায় ছিল।
কোকেন বাংলাদেশে বাজারজাত করার পরিকল্পনা ছিল নাকি ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক মাদক পাচারচক্রের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক রয়েছে কি না, তা খুঁজে বের করা হবে।
অপরাধবিষয়ক বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের বিপুল পরিমাণ কোকেন জব্দ প্রমাণ করে যে বাংলাদেশ এখনও আন্তর্জাতিক পাচারকারীদের নজরে রয়েছে।
তাদের মতে, প্রতিটি সফল অভিযান শুধু মাদক জব্দ নয়, একইসঙ্গে পাচারচক্রের নেটওয়ার্ক উন্মোচনের সুযোগও তৈরি করে।