ঢাকা | , ১২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মোদি-ট্রাম্প সম্পর্কের অবনতি: ফোনালাপ থেকে শুল্ক দ্বন্দ্ব পর্যন্ত

Jashore Now
নিউজ প্রকাশের তারিখ : Sep 2, 2025 ইং
ছবির ক্যাপশন: চীনের তিয়ানজিনে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ৩১ আগস্ট ২০২৫। ছবির ক্যাপশন: চীনের তিয়ানজিনে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ৩১ আগস্ট ২০২৫।
ad728

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ধীরে ধীরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর ধৈর্য হারাতে শুরু করেছিলেন। এই প্রসঙ্গের সূচনা হয় গত জুনে একটি ফোনালাপে, যা পরে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়।

ট্রাম্প গত মে মাসে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে শুরু হওয়া সামরিক উত্তেজনা সমাধানে নিজের ‘মধ্যস্থতা’ নিয়ে বারবার প্রকাশ্যে বলেছেন। তবে এই দ্বিপাক্ষিক সংঘাতের বাস্তবতা তার বক্তব্যের তুলনায় অনেক জটিল।

১৭ জুন মোদির সঙ্গে ফোনালাপে ট্রাম্প ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের সামরিক উত্তেজনা শেষ করতে পারায় নিজের গর্ব প্রকাশ করেন। তিনি মোদিকে জানান, পাকিস্তান তাঁকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দিতে যাচ্ছে। ট্রাম্প এ বিষয়টি নিজের জন্য সম্মানজনক হিসেবে দেখছেন।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, ট্রাম্প মোদিকে একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কিন্তু মোদি এই ইঙ্গেতে ক্ষুব্ধ হন এবং স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে সাম্প্রতিক অস্ত্রবিরতিতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ভূমিকা নেই; ভারত ও পাকিস্তানই তা সমাধান করেছে।

তবে ট্রাম্প মোদের দাবিকে গুরুত্ব দেননি। এই মতানৈক্য ও নোবেল পুরস্কার মনোনয়নের বিষয়ে মোদির অনীহা তাঁদের সম্পর্কের অবনতি ঘটিয়েছে। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে (২০১৭–২০২১) দুই নেতার মধ্যে সুসম্পর্ক থাকলেও, এখন আনুষ্ঠানিক দূরত্ব তৈরি হয়েছে।

মতবিরোধটি এমন এক সময়ে দেখা দিয়েছে, যখন দুই দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য আলোচনা চলছিল। তবে আলোচনাটি ব্যর্থ হয়েছে। ২৭ আগস্ট থেকে ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের ৫০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হয়েছে। এছাড়া রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল রপ্তানি নিয়ে আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

মোদি বর্তমানে চীনের তিয়ানজিনে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। দুই দিনের সম্মেলনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনসহ ২০টির বেশি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান উপস্থিত রয়েছেন।

নিউইয়র্ক টাইমসের বিশ্লেষণে উল্লেখ করা হয়েছে, এই সম্পর্কের শীতলযুদ্ধের মূল কারণ হলো—উভয় নেতা তেজস্বী, জনতুষ্টবাদী এবং অহংকারী। মোদি ও ট্রাম্প উভয়ে সস্তাভাবে জনগণের মন জয় করতে মরিয়া, যা তাঁদের মধ্যে সংঘাতের সম্ভাবনা তৈরি করেছে।

জুনের ফোনালাপের পর থেকে ট্রাম্প ও মোদির মধ্যে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি। ভারতের কিছু মহলে ট্রাম্পকে জাতীয় অপমান হিসেবে দেখা হচ্ছে। গত সপ্তাহে মহারাষ্ট্রে এক উৎসবে ট্রাম্পের একটি বিশাল পুতুলে তাঁকে ‘পিঠে ছুরিকাঘাতকারী’ হিসেবে চিত্রায়িত করা হয়। ভারতের এক কর্মকর্তা ট্রাম্পের আচরণকে ‘গুন্ডাগারদি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

এই ঘটনার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে গেছে, একজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নোবেল পুরস্কারের জন্য কতটা ঝুঁকি নিতে পারে এবং পাকিস্তান প্রসঙ্গে ভারতের কোনো প্রধানমন্ত্রী কিভাবে নিজেদের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদারের সঙ্গে সম্পর্ক ঝুঁকিতে ফেলতে পারেন।


নিউজটি পোস্ট করেছেন : Jashore Now

কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ