ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি সম্প্রতি ইসরাইলি শাসনব্যবস্থাকে বিশ্বের সবচেয়ে ঘৃণিত শাসনব্যবস্থা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এই মন্তব্য তিনি তার অফিসিয়াল এক্স (আগের টুইটার) পেজে হিব্রু ভাষায় প্রকাশ করেছেন।
মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) সংবাদ সংস্থা মেহের এ তথ্য জানিয়েছে। খামেনির অফিসিয়াল পেজে ইমাম রেজা (আ.)-এর শোক অনুষ্ঠানের উদ্ধৃতি দিয়ে একটি পোস্ট করা হয়। পোস্টে লেখা ছিল, "আজ আমাদের শত্রু ইহুদিবাদী শাসনব্যবস্থা, বিশ্বের সবচেয়ে ঘৃণ্য শাসনব্যবস্থা। জাতিসমূহ ইহুদিবাদী সরকারের প্রতি বিরক্ত, এমনকি সরকারগুলোও এর নিন্দা করে।"
এই মন্তব্য ইরানের দীর্ঘ সময়ের রাজনৈতিক স্থিতি এবং মধ্যপ্রাচ্য নীতি নিয়ে আলোচনার প্রসঙ্গ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। ইরানের নেতৃত্ব বহু বছর ধরে ইসরাইলের প্রতি সমালোচনা এবং বিরোধী মনোভাব প্রকাশ করে আসছে। খামেনি নিজে প্রায়শই যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলকে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
এর আগে, গত জুনে ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনা লক্ষ্য করে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র যে হামলা চালিয়েছিল, তাকে খামেনি অস্থিতিশীলতার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। তিনি দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রের মূল উদ্দেশ্য হলো ইরানকে তাদের ইচ্ছামতো পরিচালনা করা এবং ওয়াশিংটনের আনুগত্যে বাধ্য করা। খামেনির মতে, এই হামলা শুধু সামরিক আঘাত নয়, বরং ইরানের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা কাঠামোতে প্রভাব বিস্তার করার একটি কৌশল ছিল।
খামেনি আরও উল্লেখ করেন, বিদেশি শক্তিগুলো এখন ভেতর থেকে ইরানকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, "শত্রুর মূল কৌশল হলো দেশে বিভেদ তৈরি করা। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের এজেন্টরা ইরানি সমাজে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করছে।" এই মন্তব্যগুলো ইরানের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং সামাজিক সংঘাত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা দেশবাসীর প্রশংসা করে বলেন, "আজ আল্লাহর অশেষ কৃপায় দেশ ঐক্যবদ্ধ। মতের অমিল থাকলেও যখন দেশের সামগ্রিক ব্যবস্থা, রাষ্ট্র ও শত্রুর বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর প্রসঙ্গ আসে, তখন জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে যায়।" খামেনি এই মন্তব্যের মাধ্যমে ইরানি জনগণের মধ্যে জাতীয় ঐক্য বজায় রাখার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন।
ইরান-ইসরাইল ও ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ইরান বহু বছর ধরে পারমাণবিক কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং এ নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ইসরাইলের সঙ্গে ইরানের দীর্ঘমেয়াদী শত্রুতা এবং যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক চাপ ইরানের নিরাপত্তা নীতিতে প্রভাব ফেলেছে। খামেনির সাম্প্রতিক মন্তব্যগুলো এই প্রসঙ্গকে আরও স্পষ্ট করে।
ইরানের পররাষ্ট্র নীতি অনুযায়ী, তারা একদিকে পারমাণবিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করছে, অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তার এবং নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন কূটনৈতিক এবং সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। খামেনির মন্তব্যগুলো এ রূপকল্পে পড়ে যে, বিদেশি শক্তির সঙ্গে মোকাবিলায় ইরানি জনগণ এবং সরকারকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
খামেনি গত কয়েক বছরে বারবার ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তিনি বিভিন্ন বক্তৃতায় ইসরাইলি হামলা এবং পশ্চিমা নীতির সমালোচনা করেছেন। তার বক্তব্য ইরানী জনগণের মধ্যে জাতীয়তা এবং ধর্মীয় ঐক্যের বার্তা বহন করে।
খামেনির হিব্রু ভাষায় পোস্ট করা মন্তব্যগুলো ইসরাইলি জনগণকে লক্ষ্য করে বলেও মনে করা হচ্ছে। এটি ইরানের কূটনৈতিক কৌশলের একটি অংশ হিসেবে দেখা যেতে পারে। খামেনি বারবার উল্লেখ করেছেন যে, ইরান বিদেশি হস্তক্ষেপ প্রতিহত করতে দৃঢ়। তিনি বলেন, দেশের সেনাবাহিনী, সরকার ও জনগণ শত্রুর আক্রমণের মোকাবিলা করতে প্রস্তুত।
ইরানের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, খামেনির এই ধরনের মন্তব্য মধ্যপ্রাচ্যের ভৌগলিক ও কূটনৈতিক পরিস্থিতির ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে। ইরানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য জাতীয় ঐক্য অপরিহার্য। খামেনি এ বার্তা দিয়ে ইরানি জনগণকে মনে করিয়েছেন যে, দেশের নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সকলের সমন্বয় প্রয়োজন।
সাম্প্রতিক সময়ে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ও নিরাপত্তা বিষয়ক হামলার প্রেক্ষাপটে খামেনির মন্তব্যগুলো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও গুরুত্ব সহকারে প্রচারিত হয়েছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এটিকে ইরানের শক্তিশালী রূপকল্প এবং বিদেশি হস্তক্ষেপ মোকাবিলায় রাষ্ট্রীয় বার্তা হিসেবে দেখছেন।
সংক্ষেপে, খামেনির মন্তব্যগুলো একদিকে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি কঠোর সমালোচনা প্রকাশ করছে, অন্যদিকে দেশের অভ্যন্তরীণ ঐক্য এবং নিরাপত্তা রক্ষায় জনগণকে সক্রিয় রাখার চেষ্টা করছে। তার বক্তব্য ইরানের সাম্প্রতিক নিরাপত্তা নীতি এবং কূটনৈতিক কৌশলের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত।