বাদশাহ আবদুল্লাহর মৃত্যুর পর সালমান বিন আবদুল আজিজ সৌদি আরবের নতুন বাদশাহ হন। বাদশাহ আবদুল্লাহ ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন।
প্রাথমিকভাবে সালমান যুবরাজ হিসেবে তার সৎভাই মুকরিন বিন আবদুল আজিজকে ঘোষণা করেছিলেন। তখন মুকরিনের বয়স ছিল ৬৮ বছর। কিন্তু তিন মাসের মধ্যে মুকরিনকে বরখাস্ত করে ৫৫ বছর বয়সী মোহাম্মদ বিন নায়েফকে যুবরাজের পদে নিয়োগ দেন। একই সঙ্গে ২৯ বছর বয়সী মোহাম্মদ বিন সালমানকে ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী করা হয়।
মোহাম্মদ বিন নায়েফ ছিলেন মার্কিন প্রশাসনের প্রশংসিত কর্মকর্তা। তিনি এফবিআই ও স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছিলেন। ২০০৯ সালে হুমকি হিসাবে তার ওপর আত্মঘাতী বোমা হামলার চেষ্টা করা হয়েছিল, যার দায় আল-কায়েদাকে দেওয়া হয়েছিল।
মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস) দ্রুত রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী হওয়ার পর তিনি বাদশাহকে পরিবার ও বন্ধুদের থেকে আলাদা করতে শুরু করেন। বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনি তার মা ও দুই বোনকে কার্যত গৃহবন্দী করেন।
২০১৫ সালের ২৬ মার্চ এমবিএসের তত্ত্বাবধানে সৌদি বিমানবাহিনী ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সানাকে মুক্ত করতে হামলা চালায়। প্রাথমিকভাবে এই হামলা সৌদি জনগণের প্রশংসা পায়, কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে তা মোহাম্মদ বিন সালমানের পররাষ্ট্রনীতির গাফিলতি হিসেবে দেখা হয়।
এরপর ২০১৫ সালের জুনে মোহাম্মদ বিন নায়েফকে অপসারণ করে মোহাম্মদ বিন সালমানকে ক্রাউন প্রিন্স করা হয়। রাজপরিবারের বৈঠকের সময় নায়েফকে গৃহবন্দী করা হয় এবং চাপ দেওয়া হয় পদত্যাগ করতে। পরবর্তীতে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বাজেয়াপ্ত করা হয়।
মোহাম্মদ বিন সালমানের শাসনামলে নারীদের স্বাধীনতা বৃদ্ধি পায়। ২০১৮ সালে নারীদের আবায়া পরিধানের বাধ্যবাধকতা শিথিল করা হয় এবং ড্রাইভিং লাইসেন্সের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে সহজ করা।
তিনি ‘শুরা’ পরামর্শমূলক পরিষদের ঐতিহ্য বাতিল করে একক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ক্রাউন প্রিন্স হওয়ার আগে বিলাসবহুল ইয়ট ও শিল্পকর্ম ক্রয়ে সাড়া জাগান।
২০১৭ সালে সরকারি তহবিল তছরুপের অভিযোগে প্রিন্স, ব্যবসায়ী ও জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। একইভাবে লেবাননের সাবেক প্রধানমন্ত্রী সাদ আল-হারিরিকেও পদত্যাগের জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল।
মোহাম্মদ বিন সালমানের শাসনের সময় মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে। ২০১৮ সালে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছিল, সৌদি সরকার দুই হাজারের বেশি ব্যক্তিকে আটক করেছে, যাদের মধ্যে অনেককে তিন বছরের বেশি সময় কারাগারে রাখা হয়। ২৬ জন সাংবাদিকও বন্দী ছিলেন।
সবচেয়ে বিতর্কিত ঘটনা ছিল সাংবাদিক জামাল খাসোগির হত্যা। ২০১৮ সালে তুরস্কের সৌদি দূতাবাসে খাসোগিকে হত্যা করা হয়। তদন্তে জানা যায়, হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ মোহাম্মদ বিন সালমানেরই ছিল। ২০২০ সালে খাসোগির পুত্র সালেহ খাসোগি হত্যাকারীদের ক্ষমা করে দেন।
মোহাম্মদ বিন সালমান আজ সৌদি রাজপরিবারের প্রভাবশালী যুবরাজ হিসেবে দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করছেন।