ভেঙে পড়ার দুই মাস পার হলেও মেরামত করা হয়নি কক্সবাজারের পেকুয়ার রাজাখালী ইউনিয়ন ও চট্টগ্রামের বাঁশখালীর ছনুয়া ইউনিয়নের মধ্যে সংযোগকারী একটি বাঁশের সাঁকো। সাঁকো না থাকায় প্রায় ১৫ হাজার মানুষ চলাচলে সমস্যায় পড়েছেন। বিশেষ করে নিয়মিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়া প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থী দুর্ভোগে রয়েছেন।
সাঁকোটি ভেঙে যায় গত ২৯ জুন রাতে, যা পূর্বে স্থানীয় আমিরুল হক এমরুল কায়েসের অর্থায়নে প্রায় পাঁচ লাখ টাকায় নির্মাণ করা হয়েছিল। সাঁকোটি ৮০ ফুট দৈর্ঘ্যের এবং জলকদর খালের ওপর স্থাপন করা হয়েছিল।
পেকুয়া উপজেলার রাজাখালীতে বেশারাতুল উলুম কামিল মাদ্রাসা, ফৈজুন্নেছা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ, ফৈজুন্নেছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অবস্থিত। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাঁশখালীর ছনুয়া এলাকার শিক্ষার্থীরা নিয়মিত যাতায়াত করতেন।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ভাঙা সাঁকোর পাশে এখন ২০০ ফুট পশ্চিমে ডিঙিনৌকায় খাল পার হতে হচ্ছে। দুই পাড়ে কোনো পাকা সিঁড়ি না থাকায় নৌকায় ওঠা-নামায় সমস্যা হয়।
ফৈজুন্নেছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী লিজা মনি বলেন, “প্রতিদিন নৌকা নিয়ে স্কুলে যাই। বৃষ্টি হলে খুব কষ্ট হয়, পোশাকে কাদা লেগে যায়। পানি বাড়লে খাল পার হতে ভয় লাগে।”
রাজাখালীর মাদ্রাসার ফাজিল তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী উম্মে হাফসা জানান, “সাঁকো থাকলে যাতায়াত সহজ হতো। এখন ঝুঁকি নিয়ে নৌকা পারাপার করতে হচ্ছে, ক্লাসে নিয়মিত যাওয়া সম্ভব হয় না।”
ডিঙিনৌকার চালক ওসমান গণিও বলেন, শিক্ষার্থীদের খাল পারাপারের জন্য পাঁচ টাকা নেন। তিনি জানান, “প্রতিদিন কোনো না কোনো দুর্ঘটনা দেখি। শিশু ও বৃদ্ধরা নৌকা থেকে নামতে গিয়ে পানিতে বা কাদায় পড়ে যায়।”
সাঁকোটি নির্মাণের পর দুই এলাকার মানুষ সহজে যোগাযোগ করতে পারতেন। বাঁশখালীর ছনুয়া ইউনিয়নের ছেলবন, তুতুকখালী, মৌলভীপাড়া, মধুখালী, নোয়াপাড়া, আবাহখালী, টেকপাড়া, বালুখালী ও ছোট ছনুয়া গ্রামের শিক্ষার্থীরা রাজাখালীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করত। রাজাখালীর মানুষও ছনুয়ায় মাছের ঘের ও লবণের মাঠে কাজ শেষে সহজে বাড়ি ফিরতে পারতেন।
ছনুয়া ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আরফাতুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, তার ওয়ার্ডের শিক্ষার্থীরা রাজাখালীর তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে। সাঁকো না থাকায় শিক্ষার্থীদের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
ফৈজুন্নেছা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের আইসিটি শিক্ষক জাহেদুল ইসলাম জানান, অন্তত ৫০০ শিক্ষার্থী সাঁকো পার হয়ে রাজাখালীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসেন।
সাঁকোর উদ্যোক্তা আমিরুল হক ইমরুল কায়েস বলেন, সাঁকোটি শিশুদের নিরাপদ পারাপারের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। একটি লবণের ট্রলারের কারণে সাঁকো ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং পরে কেউ এটি ভেঙে দিয়েছে।
পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মঈনুল হোসেন চৌধুরী জানান, সাঁকো দুই উপজেলার সংযোগ স্থাপন করেছিল। স্থায়ী কোনো অবকাঠামো নির্মাণ করা যায় কি না, তা বাঁশখালীর ইউএনওর সঙ্গে আলোচনা করে দেখা হবে।